গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১। মোঃ হাসান (৩৫) ২। গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন (৫০) ৩। শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল (৪৩) ৪। মোঃ ইমদাদুল শরীফ (২৮) ও ৫। মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপন (২৭)
বুধবার (১৮ জুন ২০২৫ খ্রি.) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ জুন ২০২৫ খ্রি. সকাল আনুমানিক ৮:৫৫ ঘটিকায় নগদের ডিস্ট্রিবিউটর জনৈক আব্দুল খালেক নয়ন তার উত্তরার ১২ নং রোডের ৩৭ নং বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানের চারজন কর্মচারীসহ চারটি ব্যাগে এক কোটি আট লক্ষ ১১ হাজার টাকা নিয়ে দুটি মোটরসাইকেল যোগে উত্তরার নগদের অফিসের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে উত্তরা ১২ ও ১৩ নং রোডের সংযোগস্থলে একটি কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে ‘র্যাব’ লেখা কালো কটি পরিহিত মুখে কালো কাপড় বাঁধা ৬/৭ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি হাতে অস্ত্র নিয়ে নামে।
থানা সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর উত্তরা বিভাগ ও ডিবি ঘটনার রহস্য উদঘাটন, আসামি গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধারে তৎক্ষণাৎ কাজ শুরু করে। উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এর নেতৃত্বে উত্তরা বিভাগের এডিসি, এসি, অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি চৌকস দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও চালককে সনাক্ত করে। অতঃপর বুধবার (১৮ জুন ২০২৫ খ্রি.) রাত আনুমানিক ১:৪৫ ঘটিকায় খিলগাঁও থানা এলাকা থেকে মাইক্রোবাসের চালক মোঃ হাসানকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানার একটি টিম। এ সময় তার হেফাজত হতে নকল একটি নেমপ্লেট ও নগদ আট হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। অতঃপর গ্রেফতারকৃত হাসানের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সবুজবাগ থানার মাদারটেক চৌরাস্তার স্বপন মিয়ার গ্যারেজ থেকে উক্ত ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।
ডিবি উত্তরা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডিবি উত্তরা বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে। পরবর্তীতে উক্ত ডাকাত চক্রের মূলহোতা গোলাম মোস্তফা ঘরামী ওরফে শাহিনকে বুধবার (১৮ জুন ২০২৫ খ্রি.) রাত আনুমানিক ১০:৪০ ঘটিকায় ঢাকার উত্তরা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত তের লক্ষ চৌত্রিশ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। অতঃপর গ্রেফতারকৃত শাহিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোঃ ইমদাদুল শরীফকে রাত আনুমানিক ১১:৫০ ঘটিকায় আদাবর থানাধীন বায়তুল আমান হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয। এ সময় তার নিকট হতে লুষ্ঠিত আট লক্ষ চার হাজার ৭৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শাহিন ও শরীফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট শেখ মোঃ জালাল উদ্দিনকে একই দিন রাতে সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার নিকট হতে নগদ ৬৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জালাল নিজেকে ক্যাপ্টেন জালাল হিসেবে নিজেকে পরিচয় প্রদান করে। জালাল ঘটনার পরদিন লুষ্ঠিত ১২ লক্ষ টাকা ঢাকা ব্যাংকের নিজ নামীয় একাউন্টে জমা করে। উক্ত টাকা জব্দের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
ডিবি সূত্র আরও জানায়, পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাত চক্রের অপর সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপনকে বুধবার রাতে এয়ারপোর্ট রেল স্টেশন এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের হেফাজত হতে র্যাব ও পুলিশের নকল আইডি কার্ড, লাঠি, সিগনাল লাইট, সেনাবাহিনীর লোগো সম্বলিত মানিব্যাগ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
থানা ও ডিবি সূত্রে জানা যায়, ডাকাত দলের দলনেতা মোস্তফা ওরফে শাহিন একজন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য এবং শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট। এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে র্যাব ও পুলিশের পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।