NEWSVOb অনলাইন ডেস্ক ঃ ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নিলার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতিসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। স্বামী ফটিক ও ভাই বকুল তাঁর এসব কাজে প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের কয়েক শ কোটি টাকার জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে নিলার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই জমিতে তাঁর নিজের নামে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। নিলা মার্কেটের পাশে দখলি জায়গায় মেলার আয়োজন করেছেন নিলা ও তাঁর লোকজন। এলাকাবাসী জানায়, মেলার নামে সেখানে মদ-জুয়াসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলে। আর এখান থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন নিলা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই এ মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ মার্কেটের বেশ কয়েকটি দোকানঘরের পজিশন বিক্রি করা হয়েছে। একেকটি পজিশন এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখানে শওকত আলী, সিরাজ মিয়া, আবু মিয়া, লাত মিয়াসহ অনেকেই পজিশন কিনে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন।
রাজউক উপশহরের ভোলানাথপুর এলাকার ৩০০ ফুট সড়কের পাশেই রয়েছে সরকারি জমি। রাজউকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে সেই জমি দখলে নিয়েছেন নিলা। সরকারি জমিতে পাকা, আধাপাকা কয়েক শ দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকান ভাড়া দিয়ে নিলা কামিয়ে নিচ্ছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি করে নিলা ও তাঁর লোকজন মাসে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানায় মার্কেট ও ওই দোকানঘরগুলো ঘিরে ভোলানাথপুরসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের আস্তানা। এসব আস্তানায় সহজেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার মাদক। প্রভাবশালী হওয়ায় নিলার অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না কেউ। এমনকি র্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনের চোখের সামনে জবরদখলসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
রাজউকের জায়গায় ঈদের পর থেকেই কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই তাঁতবস্ত্র, কুটিরশিল্প ও বিনোদন মেলার নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া ও মাদক ব্যবসা। ওই মেলায় ঢুকতে টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয়। সেখানে গভীর রাতে জাদু প্রদর্শনের নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য। মেলার আশপাশে বসানো হচ্ছে জুয়া ও মাদকের স্পট। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব হচ্ছে বলে জানান আয়োজকরা। আর সবকিছুর পেছনেই আছেন ওই জনপ্রতিনিধি নিলা। তাঁর এসব কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
নিলা মার্কেটের সামনেই রয়েছে একটি কবরস্থান। কবরস্থানের আশপাশেই হাত বাড়ালে মেলে মাদক। আর এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নিলার লোকজন। নিলার ছত্রচ্ছায়ায় চাঁদাবাজিসহ ৩০০ ফুট রাস্তায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি লেগেই আছে। আর এসব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে নিলার ভাই বকুল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন সবজি চাষি জানায়, তারা আগে ৩০০ ফুট সড়কের পাশে খোলা জায়গায় বসে সবজি বিক্রি করত। এখন নিলার মার্কেটে দোকান বসিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। আর এ জন্য প্রতিদিন ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ‘ভাড়া’ দিতে হচ্ছে। এমন অভিযোগ আছে চা দোকানি ও চটপটি দোকানদারদেরও।
জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নিলা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ মার্কেটের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। স্থানীয় এমপি মহোদয় রাজউক বরাবর ডিও দিয়ে একটি আবেদন করেছেন। সেখানে রাজউকের কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত আমাদের গ্রামের নিরীহ মানুষজনকে ব্যবসা করতে দেওয়া হোক—এটাই আমাদের দাবি। বাজার থেকে চাঁদা আদায়সহ কোনো ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে আমার বা আমার পরিবারের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে না।’
রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, সেখানে তাঁত মেলার একটি অনুমোদন প্রশাসন থেকে নেওয়া আছে। তবে মেলায় কোনো ধরনের জুয়া বা অশ্লীল নৃত্য হওয়ার কথা আমার জানা নেই।’ জাদু বা বিনোদনের আড়ালে অসামাজিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে কি না জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এগুলো আমাদের সংস্কৃতি, এ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা দেশের উন্নয়নে বাধা দিতে চায়।’
এসব বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর মোবাইলে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে মেলায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সূত্র : কালের কন্ঠ