আজিমপুরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্ত গণিতের সিনিয়র শিক্ষক গ্রেফতার
প্রতিনিধির নাম
-
আপডেট এর সময়
বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
-
৭৫
বার দেখা হয়েছে
নিউস ভয়েস অফ বাংলাদেশ নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বর্তমানে ভিকারুননিসা নূন স্কুল, আজিমপুর দিবা শাখায় ৮ম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত। তার মেয়ে ইং-২০২৩ সালে ৭ম শ্রেনীতে পড়ার সময় বিবাদীর ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টার, বাসা নং-১০৩ (৩য় তলা) পিলখানা রোড, আজিমপুর, থানা-লালবাগ, ঢাকায় ভর্তি হয়। কোচিং চলাকালীন প্রায় সময় বিবাদী বাদীর মেয়ে সহ তার সহপাঠীদের সাথে কুরুচিপূর্ণ প্রাপ্ত বয়স্কদের কৌতুক শুনাতো। বাদীর মেয়ে স্কুলে নাচ করতো এবং উক্ত নাচের ভিডিও বিবাদী ঘুমানোর আগে দেখতো বলে তার মেয়েকে প্রায়ই বলতো।
বিগত ইং-১০/০৩/২০২৩ তারিখ বেলা অনুমান ১২.৩০ ঘটিকার সময় কোচিং শেষে বাদীর মেয়ের সহপাঠীরা চলে যাওয়ার সময় বিবাদী তার মেয়েকে কৌশলে ডেকে বসিয়ে রেখে বিবাদীর উল্লিখিত কোচিং সেন্টারে দুপুরের খাবারের পর রান্নাঘর থেকে পানি আনার কথা বলে এবং হঠাৎ করে পিছন থেকে বিবাদী তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মুখে চুম্বন করে, এতে ভিকটিম অস্বস্তি বোধ করলে বিবাদী বাদীর মেয়েকে বলে, আমি তোমাকে বাবার মতো জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেছি এটা কাউকে বলবে না। পরবর্তীতে বিবাদী প্রায় সময়ই কোচিং শেষে কৌশলে ভিকটিমকে রেখে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতো এবং তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শ কাতর স্থানে হাত দিতো, এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকে এবং বিবাদী বাদীর মেয়ের মুখ, বুক, যৌনাঙ্গ সহ বিভিন্ন স্পর্শ কাতর স্থানে পোশাকের উপরে এবং ভিতরে হাত ঢুকিয়ে স্পর্শ করে চাপ দিতো। বাদীর মেয়ে জিন্স ও টি শার্ট পড়ে কোচিং সেন্টারে আসলে বিবাদী সেগুলো পরিধান না করে ঢিলেঢালা সেলোয়ার কামিজ পড়ে আসার জন্য বলতো।
গত ইং-১৬/১১/২০২৩ তারিখ বেলা অনুমান ০১.০০ ঘটিকায় বাদীর মেয়ের স্কুলে মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষে স্কুলের পার্শ্ববর্তী বিল্ডিং বিবাদীর কোচিং সেন্টারে পড়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় এবং বিকাল অনুমান ০৩.১৫ ঘটিকায় কোচিং শেষে বাদীর মেয়ের অন্যান্য সহপাঠীরা চলে গেলেও বাদীর মেয়েকে বিবাদী কৌশলে বসিয়ে রাখে এবং পাশের নামাজের রুমে যেতে বলে।
উক্ত রুমের আলো নিভিয়ে বাদীর মেয়েকে জোর করে জড়িয়ে ধরে মেয়ের মুখ, গালে চুমু দেয়, বুক ও যৌনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্পর্শ কাতর স্থানে পোশাকের উপরে এবং ভিতরে হাত ঢুকিয়ে স্পর্শ করে চাপ দেয় এবং বিবাদী তার লিঙ্গ বের করে মেয়েকে তার লিঙ্গ ধরতে বলে ও মেয়ের হাত ধরে জোরাজোরি করে এবং মেয়ের পরিহিত জামা কাপড় খুলার চেষ্টা করে শ্লীলতাহানী করে। মেয়ে অসম্মতি জ্ঞাপন করলে বিবাদী বাদীর মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে বলে আমি তোমার বাবার মতো তাই এরকম করেছি এই ঘটনা ভুলে যাও, এই ঘটনা জানাজানি হলে তোমার মা-বাবার সম্মানহানি হবে এবং স্কুল থেকে তোমাকে বের করে দিবে।
বিবাদীর ভয়ে এতদিন বাদীকে জানায়নি। বিবাদী মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের এ ধরনের অশালীন আচরণের ঘটনা স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে গত ইং-০৩/০২/২০২৪ তারিখ সকাল অনুমান ১১.০০ ঘটিকায় বাদী সহ আরোও বেশ কয়েকজন অভিভাবকদের নিজ নিজ সন্তান সহ স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলে ডেকে নিয়ে আসে এবং বিবাদী কর্তৃক বাদীর মেয়ে সহ স্কুলের অন্যান্য ছাত্রীরা শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছে কি-না জানতে চান, তখন বিষয়টি বাদী জানতে পেরে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলে মেয়ে উপরোক্ত ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানায় এবং অন্যান্য অভিভাবকদের মধ্যেও বিষয়টি জানাজানি হলে উক্ত বিবাদী বাদীর সঙ্গীয় অভিভাবকবসহ উক্ত স্কুলের সাবেক ও বর্তমান অধ্যয়নরত অনেক মেয়েদের সঙ্গে বাদীর মেয়ের মতো একই অশালীন আচরণ করে শ্লীলতাহানী ঘটিয়েছে মর্মে জানা যায়।
আরো অনেক ছাত্রীদের সঙ্গে উপরোক্ত বিবাদীর এই ধরণের অশালীন কার্যকলাপের বিষয়টি প্রকাশ পেলে বিবাদী গত ইং-০৪/০২/২০২৪ তারিখ বিকাল অনুমান ০৩.৩০ ঘটিকার সময় বাদীর বর্তমান ঠিকানার বাসায় যায় এবং উক্ত ঘটনার বিষয়ে প্রকাশ না করার জন্য বাদীকে ও বাদীর মেয়েকে নিষেধ করে। একপর্যায়ে উপরোক্ত ঘটনাবলি স্কুলের প্রাক্তন এবং বর্তমান অসংখ্য ভুক্তভোগী ছাত্রী ও অভিভাকদের মধ্যে জানাজানি হওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে বাদী সহ অন্যান্য অভিভাবক ও স্কুলের ছাত্রীদের সমন্বয়ে বিবাদী শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে ভিকারুননিসা নূন স্কুল, আজিমপুর শাখার সামনে গত ২৫/০২/২০২৪ তারিখ মানববন্ধন সহ বিক্ষোভ এবং প্রেস ক্লাবে প্রেস কনফারেন্স করেন।
উপরোক্ত ঘটনার বিষয়ে বাদীর মেয়েসহ মেয়ের সহপাঠী ভুক্তভোগী অন্যান্য ছাত্রীদের নিকট বিস্তারিত শুনে ও বাদীর পরিবারের অন্যান্য লোকদের সাথে আলোচনা করে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করিলে অত্র মামলা রুজু হয়। লালবাগ থানার মামলা নং- ১৭,তারিখ-২৬/০২/২০২৪ ইং, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ১০ । মামলার আসামী মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকার (৪৮), পিতা-মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সরকার, মাতা-মোসাঃ হনুফা বেগম, সাং-বাসা নং-৫৫/এ/৩ উত্তর ধানমন্ডি, থানা-কলাবাগান, জেলা-ঢাকা, বর্তমানে গণিতের সিনিয়র শিক্ষক, দিবা শাখা, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ১০১ পিলখানা রোড, আজিমপুর, থানা-লালবাগ, ঢাকাকে গত ২৭/০২/২০২৪ গ্রেফতার করেছে লালবাগ থানা পুলিশ।
মামলা রুজু হওয়ার পর উপ-পুলিশ কমিশনার(লালবাগ বিভাগ) মহোদয়ের সার্বিক দিক নিদের্শনা ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় লালবাগ জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মহোদয়ে সার্বিক তত্ত্বাবধানে সহকারী পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের নেতৃত্বে লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ ও সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সের সহায়তায় ইং-২৭/০২/২০২৪ তারিখ রাত ০১.৩০ ঘটিকার সময় কলাবাগান থানা এলাকায় আসামীর নিজ বাসা হতে উপরোক্ত ঘটনার সাথে জড়িত এজাহারনামীয় আসামী মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকার(৪৮) কে গ্রেফতার করা হয় এবং তার ব্যবহৃত ০১টি Android Mobile , যাহার মডেল নং- SAMSUNG GALAXY- A30. IMEI-356147100031367, 356148100031365 উক্ত মোবাইলে সংযুক্ত সিম- 01713270807, 01976150250 ও মেমোরি কার্ড Transcend 128 GB এবং ব্যবহৃত ০১টি কালো রংয়ের ল্যাপটপ DELL Latitude 7280, Serial no-400B3M2 উদ্ধারপূর্বক জব্দ তালিকা মূলে মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ০৭(সাত) দিনের রিমান্ডের আবেদন সহ ইং-২৭/০২/২০২৪ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করিলে বিজ্ঞ আদালত ০২(দুই) দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামীকে রিমান্ড প্রাপ্ত হয়ে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। মামলার ভিকটিম বিজ্ঞ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ২২ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করেছে। উহা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জব্দকৃত আলামত পর্যালোচনা করে ভিকটিম সহ অন্যান্য ছাত্রীদের বেশ কিছু অডিও রেকর্ডিং ও কথোপকথনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যাহা যাচাই-বাচাই অব্যাহত আছে।
জালালুর রশীদ খান
সংবাদটি শেয়ার করুন
এই বিভাগের আরো খবর