নিউস ভয়েস অফ বাংলাদেশ নিজস্ব প্রতিবেদক : বিপুল ডকুমেন্টস ও ডিভাইস নিয়ে রোহিঙ্গা নারী – পুরুষ, দালাল ও ২ আনসার সদস্যসহ ২৩ জন গ্রেফতার।।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম রাজধানীর আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট সংক্রান্ত ডকুমেন্টস, পাসপোর্ট এবং কম্পিউটারসহ ০৩ রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ, ১০ জন বাংলাদেশীকে গ্রেপ্তার করে।
তাদের দেয়া তথ্য সংগৃহীত ডকুমেন্টস বিশ্লেষণ করে ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ দিনে ও রাতে কক্সবাজার, টাঙ্গাইল এবং ঢাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ০২ আনসার সদস্যসহ রোহিঙ্গা ও বাঙালি দালাল চক্রের ০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের হেফাজত থেকে মোট ১৭ টি পাসপোর্ট, ১৩ টি এনআইডি, ০৫ টি কম্পিউটার, ০৩ টি প্রিন্টার, ২৪ টি মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্ট তৈরির সংশ্লিষ্ট শত শত দলিলপত্র জব্দ করেছে।
গ্রেফতারকৃত রোহিঙ্গারা হলো ১.উম্মে ছলিমা@ ছমিরা, ২. মরিজান ও ৩. রশিদুল।
রোহিঙ্গা দালাল ৪. আইয়ুব আলী ও ৫. মোস্তাকিম। আনসার সদস্য ০২ জন ৬. জামসেদুল ইসলাম ও ৭. মোঃ রায়হান। কুখ্যাত বাঙালি দালাল ৮.রাজু শেখ, ৯. শাওন হোসেন@ নিলয়, ১০. ফিরোজ হোসেন, ১১. মোঃ তুষার মিয়া। আগারগা, মোহাম্মদপুর, উত্তরাতে ফিরে ফিরে কম্পিউটারের দোকান খুলে জঘন্য এ কাজে লিপ্ত গ্রেপ্তারকৃত অপর দালাল গুলো হলো: ১২. মোঃ শাহজাহান শেখ, ১৩. মোঃ শরিফুল আলম ১৪. জোবায়ের মোল্লা ১৫. শিমুল শেখ ১৬. আহমেদ হোসেন ১৭.মোঃ মাসুদ আলম ১৮. মোঃ আব্দুল আলিম ১৯. মোঃ মাসুদ রানা ২০. ফজলে রাব্বি শাওন ২১. রজব কুমার দাস দীপ্ত ২২. আল-আমিন ২৩. মোঃ সোহাগ (২৮)
শক্তিশালী এই চক্রটি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদেরকে লক্ষাধিক করে টাকার বিনিময়ে জন্ম সনদ BRC, NID ও Passport বানিয়ে দেয়।
গ্রেফতারকৃত চক্রটির একটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে রোহিঙ্গাদেরকে ঢাকায় নিয়ে আসে। আরেকটি দল এদের জন্য জন্ম সনদ, NID বানিয়ে দেয়। সর্বশেষে অন্য দলটি ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাংকে Express, Super Express ধরনের টাকা জমা দেয়া, বায়োমেট্রিক্স করা ও ছবি তুলার ব্যবস্থা করে দেয়।
ছয় ঘন্টার মধ্যে জন্ম সনদের জন্য এরা ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। তিন দিনের মধ্যে এনআইডি করে নেয়ার জন্য ২৫০০০ টাকা এবং পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত দালালদের মোবাইলে শত শত পাসপোর্ট করে দেয়ার প্রাসঙ্গিক সফট ডকুমেন্টস, ডেলিভারি স্লিপ পাওয়া গিয়েছে যার মধ্যে গত তিন মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য করা ১৪৩ টি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি রোহিঙ্গাদের, বাংলাদেশী দাগি অপরাধীদেরকে ভিন্ন নাম ও ঠিকানায় পাসপোর্ট করে দিচ্ছে বলে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম সনদ ও এনআইডি বানিয়ে তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট বানিয়ে থাকে।
প্রযুক্তি অনুশীলনে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ডাটা, ডিজিটাল জন্ম সনদ ডাটা, স্মার্ট এনআইডি ডাটা ব্যাংক আছে যেখানে বিভিন্ন বায়োমেট্রিক্স, ছবিসহ নানা তথ্য সংরক্ষিত। এ সকল তথ্য কোনরকম ভেরিফাই না করেই ইচ্ছামতো তৈরি করা কাগজপত্রের ভিত্তিতে পাসপোর্ট অফিসে যে কেউ দালালদের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে, বায়োমেট্রিকস দিতে এবং পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের স্মারক পাসপোর্ট তৈরীর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে রোহিঙ্গা ডাটা, ডিজিটাল জন্ম সনদ ডাটা এবং স্মার্ট এনআইডি ডাটা ভেরিফাই করলেই রোহিঙ্গাসহ নন – বাংলাদেশিদেরকে সনাক্ত করা সম্ভব।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছে।
জালালুর রশিদ খান