1. rajubdnews@gmail.com : admin :
  2. newsvob57@gmail.com : News VOB : News VOB
সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ০৪:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সেন্টমার্টিন রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা জুলাই অভ্যুত্থানের সাহসী নারীদের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে দেবো না: শারমীন মুরশিদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অপরাধীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে: মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপি কমিশনার মানিলন্ডারিং মামলায় বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এর চেয়ারম্যান লায়ন এম.কে খায়রুল বাসার সিআইডি’র ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম টীম কর্তৃক অটক। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামনে চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনায় পাঁচজন গ্রেফতার আজওয়াহ হজ ট্রাভেলস আয়োজিত হাজিদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ১৫ বছরের সাংবাদিকতা নিয়ে তদন্ত হবে : উপদেষ্টার প্রেস সচিব প্রথমার্ধেই তুর্কমেনিস্তানের জালে ৭ গোল বাংলাদেশের মেয়েদের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী উপলক্ষে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ বিশেষ অভিযানে ছিনতাইকারী, মাদক কারবারিসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা পুলিশ

যে নির্বাচন কমিশনারকে ভারতীয় নেতারা ভয় পেতেন

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৯
  • ৬৪ বার পঠিত হয়েছে

ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সময় সে দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় প্রখ্যাত হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক টি এন শেষন-কে।

তাকে অনেকটা জোর করেই এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাজীব গান্ধী। তিনি নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পর ওই সংস্থাটির খোল নলচে বদলে ফেলেছিলেন। নির্বাচন কমিশন যে ভারত সরকারের অংশ নয়, একটা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, এই ধারণাটি তিনিই প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন।

নানা সাহসী পদক্ষেপ এবং কঠোর ব্যক্তিত্বের কারণে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকসাইটে নেতারা তাকে সমীহ করে চলতেন। আরো ভালো করে বললে, তারা তাকে ভয় পেতেন।

দেব-দেবীর ছবি সরানো

টি এন শেষন ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পর প্রথম দিন কাজে যোগ গিয়েই একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেন। তিনি তার কার্যালয় থেকে সমস্ত দেব দেবীর ছবি ও মূর্তি সরিয়ে ফেলার আদেশ দেন। যদিও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি খুবই ধার্মিক ছিলেন।

এটা কেবল তো শুরু। এরপরও আরো অনেক বৈপ্লবিক কাজ করেছেন যা এর আগে কোনো ভারতীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার করার সাহস পাননি। কেননা এর আগের নির্বাচন কমিশনকে সরকারের লেজুড় বলে মনে করা হত।

এ প্রসঙ্গে তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, ‘আমার মনে আছে, যখন ক্যাবিনেট সচিব ছিল, সেই সময়ে একবার প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে বলেছিলেন যে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিন যে কোন কোন দিন নির্বাচন করাতে চায় সরকার।’

জবাবে টি এন শেষন প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘এটা আমরা বলতে পারি না। নির্বাচন কমিশনকে শুধুমাত্র এটুকুই আমরা বলতে পারি যে সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। ’

ভারতে একটা সময়ে আইন মন্ত্রীদের ঘরের বাইরে অপেক্ষা করতে হত নির্বাচন কমিশনারদের। ডাক আসলে তারা ভিতরে যেতেন। কিন্তু এ নিয়ম পছন্দ হয়নি তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষনের। তিনি নিজে কখনও মন্ত্রীর দপ্তরে যাবেন না বলে স্থির করেন।

তার আগে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে চিঠি আসত, ‘নির্বাচন কমিশন, ভারত সরকার’ এই নামে। কিন্তু টি এন শেষন সরকারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘আমি ভারত সরকারের অংশ নই।’

আর এতটা স্বাধীন ছিলেন বলেই রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পর সরকারের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা না করেই তিনি লোকসভা নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

শীর্ষ আমলাদের শাস্তি

১৯৯২ সালের গোঁড়ার দিক থেকেই ভুল করলেই সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেন টি এন শেষন। এদের মধ্যে যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবরা ছিলেন, তেমনই ছিলেন নানা রাজ্যের মুখ্য সচিবরাও।

একবার নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব ধর্মরাজনকে ত্রিপুরা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি আগরতলা না গিয়ে দপ্তরের অন্য কোনও কাজে থাইল্যান্ড চলে গিয়েছিলেন।

তখন টি এন শেষন দ্রুত আদেশ জারি করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ধর্মরাজনদের মতো অফিসারদের বোধহয় ভুল ধারণা রয়েছে যে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া দায়িত্বটা একটা বোঝা। পালন করলেও হয়, না করলেও হয়। তিনি যদি মনে করে থাকেন ভোটের কাজের থেকে বিদেশে যাওয়া বেশি জরুরি, তাহলে তার এই ভুল ধারণাটা ভেঙ্গে দেয়ার দরকার আছে।’

তিনি আরো একটি কাজ করেন। ধর্মরাজনকে কড়া শাস্তি না দিয়ে তার চাকরিজীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ নথি – কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্টে এই গুরুতর বিষয়টির উল্লেখ করার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্ট একজন সরকারি চাকুরের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি, যা দিয়ে তাদের পদোন্নতি নির্ভর করে।

একের পর এক নির্বাচন স্থগিত

টি এন শেষনের একের পর এক নির্দেশের ফলে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। কিন্তু তখনও আরও অনেক কিছু দেখার বাকি ছিল।

১৯৯৩ সালের ২রা অগাস্ট টি এন শেষন একটা ১৭ পাতার নির্দেশ জারি করেন। তাতে লেখা হলেখা ছিলো, ‘যতদিন না নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাকে সরকার স্বীকার করে নিচ্ছে ততদিন দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। কেননা ভারত সরকারের নিজেই এমন কিছু প্রথা সৃষ্টি করেছে, যার ফলে নির্বাচন কমিশন তার নিজের সাংবিধানিক কর্তব্য পালন করতে অসমর্থ হচ্ছে।’

রাজীব গান্ধীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিলো টি এন শেষনের

‘তাই নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কমিশনের অধীনে যত নির্বাচন হওয়ার কথা, সেই সব ভোট প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত।’

এই নির্দেশের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন ওই নির্বাচন কমিশনার। পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার একটি আসনের নির্বাচন হতে দেননি টি এন শেষন। ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখার্জীর সময়কাল শেষ হয়ে গিয়েছিল আর তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।

এ ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে টি এন শেষনকে তিনি ‘পাগলা কুকুর’ বলে গালি দিয়েছিলেন।

আর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং বলেছিলেন, ‘আমরা এতদিন কারখানায় লক আউট জানতাম। শেষনের আমলে তো গণতন্ত্রই লক আউট হয়ে গেল।’

শেষনকে যেভাবে শায়েস্তা করেছিল সরকার

টি এন শেষনের একের পর এক নির্দেশে রাজনীতির মহলে শোরগোল আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এবারে সরকার ভাবতে লাগল কীভাবে তাকে জব্দ করা যায়। এই পরিকল্পনা থেকেই নির্বাচন কমিশনে আরও দুজন নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করে দিল সরকার।

তাদের যেদিন নিয়োগ দেয়া হয় সেদিন দিল্লির বাইরে ছিলেন টি এন শেষন।

যে দুজনকে নিয়োগ করা হল নির্বাচন কমিশনার হিসাবে, তাদের মধ্যে একজন, এম এস গিল এবং অন্যজন আরেকজন কমিশনার কৃষ্ণমূর্তি। টি এন শেষন যখন দিল্লিতে ফিরলেন, তারপরে অন্য দুজন কমিশনারের সঙ্গে প্রথম বৈঠকটা ছিল বেশ গম্ভীর। বলাবাহুল্য এই দুজনের সঙ্গে তার সম্পর্ক বরাবরই শীতল ছিল।

যদিও এম এস গিল পরে জানিয়েছিলেন, তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মোটামুটি সহযোগিতাই করতেন, তাই তার সঙ্গে সম্পর্কটা খুব বেশি খারাপ ছিলো না। কিন্তু কৃষ্ণমূর্তি কাজে যোগ দিয়েই রাষ্ট্রপতির কাছে তার বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ করেন যে, তাকে বসার জায়গা দেওয়া হচ্ছে না!

তবে এভাবে দুজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করার বদলা শেষন নিয়েছিলেন একবার বিদেশ ভ্রমণে যাওয়ার সময়। দুইজন নির্বাচন কমিশনার থাকা সত্ত্বেও তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন একজন উপ নির্বাচন কমিশনারকে।

এ সম্পর্কে গিল বলেন, ‘আমাদের দুজনকে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করেছন। কিন্তু আমাদের বাদ দিয়ে একজন আমলাকে নির্বাচন কমিশন চালানোর দায়িত্ব দিয়ে দিলেন তিনি। এ নিয়ে তখন সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়। আদালতই আদেশ দেয় শেষনের অনুপস্থিতিতে আমরা দুজন নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম চালাবো।’

প্রসঙ্গত, পরবর্তীতে ভারতের প্রধান নির্বচন কমিশনার নিযুক্ত হয়েছিলেন এই এম এস গিল।

কার সঙ্গে লড়াই করেননি শেষন?

টি এন শেষন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যতদিন কাজ করেছেন, সেই সময়ে এমন কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিল না বোধহয়, যার সঙ্গে তার বিরোধ বাঁধে নি! রাজনৈতিক দলগুলো বা সংবাদমাধ্যম তার নাম দিয়েছিল ‘টাইট নাট শেষন’ – তিনি সবাইকে ‘টাইট’ দিতেন বলে।

এই তালিকায় প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপাল গুলশের আহমেদ বা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব।

শেষনই প্রথমবার বিহারে চার দফায় নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করেন। আর প্রতিটা দফার তারিখ বদলাতে থাকেন।

এ সম্পর্কে এম এস গিল পরে বলেন, ‘শেষনের সব থেকে বড় অবদান এটাই যে তিনি নির্বাচন কমিশনকে ‘সেন্টার স্টেজে’ নিয়ে এসেছিলেন। তার আগে কেউ তো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নামই জানত না। আর প্রত্যেকেই নির্বাচন কমিশনকে অবহেলা করতো।’

বলা হয়ে থাকে টি এন শেষনই ভারতের নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান স্বীকৃত স্থানে বসিয়ে গেছেন। এখন যে ভারতের নির্বাচন কমিশন ভোটের ব্যাপারে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা শেষনের আমল থেকেই শুরু হয়। ভোটের প্রতিটি বিষয়ে নজরদারি এবং নিয়ম লঙ্ঘণে শাস্তির যে বিধান, এসবের পিছনেই এই ‘নীতিবান’মানুষটির অবদান রয়েছে। তার করা ট্র্যাডিশনই এখনও অনুসরণ করছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

আপনার স্যোশাল মিডিয়ায় সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © News Voice of Bangladesh
Theme Customized BY LatestNews