Newsvob.com.: আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় বিচলিত কেন্দ্র। মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র সমান কোভিডের পাশাপাশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সমস্যা বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত ৭ হাজার ২৫১ জন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের শিকার হয়েছেন বলে খবর। মারাও গিয়েছেন ২১৯ জন। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কোভিড পজিটিভ এবং অতিরিক্ত স্টেরয়েডের ব্যবহার, এই তিনটি একজোট হলেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তাই অপ্রয়োজনে স্টেরয়েডের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি ডায়াবেটিসে সুগারস্তর অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ গবেষক, চিকিৎসকরা। সচেতনতার সতর্কবার্তা প্রচারের পাশাপাশি কোভিড চিকিৎসকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। রাজ্যগুলিকেও স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ রুখতে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ফাঙ্গাসরোধী ওষুধ, ইঞ্জেকশনের যোগান বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই বিদেশ থেকে ব্যাপক মাত্রায় নির্দিষ্ট ভায়াল আমদানি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতে যে পাঁচটি কোম্পানি নির্দিষ্ট ওষুধ তৈরি করে, তার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়াতে আরও পাঁচটি কোম্পানিকে বরাত দেওয়া হয়েছে।
আইসিএমআর জানিয়েছে, বাতাসে ধুলিকণার মধ্যে থাকতে পারে ফাঙ্গাসের অতি সূক্ষ্ণ কণা। যা অনায়াসেই মানুষের শরীরে ঢুকতে পারে নাক মুখ দিয়ে। তাই নির্মাণ কাজ চলছে, এমন জায়গায় কোনভাবেই মাস্ক ছাড়া যাওয়া চলবে না বলেই সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, যারা ধুলো, মাটি, সার, শৈবাল নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা অবশ্যই জুতো, ফুলহাতা জামা এবং ফুল প্যান্ট পরবেন। পরবেন গ্লাভস। মুখে মাস্ক তো করোনা পরিস্থিতিতে একপ্রকার আবশ্যিক। এরই পাশাপাশি নিজেকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
কেন্দ্রের কোভিড মোকাবিলায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটির অন্যতম সদস্য নয়াদিল্লি এইমসের ডিরেক্টর ডাঃ রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নতুন কোনও রোগ নয়। আগেও ছিল। তবে অত্যন্ত বিরল। কিন্তু এখন কোভিড পরিস্থিতিতে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। তাই কোনওভাবে মিউকোরমাইকোসিসের লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হতে হবে।
লক্ষণ কী? জবাবে ডাঃ গুলেরিয়া জানিয়েছেন, মাথার যন্ত্রণা, নাক দিয়ে সবুজ রঙের সর্দি বেরনো, নাকের মধ্যে দিয়ে শ্বাস নিতে অসুবিধে বোধ, নাক দিয়ে রক্ত বেরনো, সাইনাসের ব্যথা, মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া বা অভিব্যক্তি প্রকাশে সমস্যা নাক, চোখের আশপাশ এবং মুখের ক্যাভেটিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের লক্ষণ। এমনকী মস্তিষ্কেও তা ছড়াতে পারে। একইভাবে জ্বর, বুকে ব্যথা, কাশি বা কাশির সঙ্গে রক্ত বেরনোও ফুসফুসে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হানার লক্ষণ। যদিও এইমসের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, এগুলি হলেই যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, তা নাও হতে পারে। তাই লক্ষণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। নিজেরা ডাক্তারি করবেন না। আর বারবার বলছি, যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা অবশ্যই সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কাঁচা ফল খেলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের শিকার হতে পারেন বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তা সঠিক নয় বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি।