ফেনী সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা। শামীম সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা ছাত্রলীগের সভাপতি।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ফেনী পিবিআই’র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এরআগে নূরউদ্দিনকে ময়মনসিংহের ভালুকা সিড স্টোর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন পিবিআই সদস্যরা।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন নূরউদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম। যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে ‘সিরাজ উদ দৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটির সদস্য ছিলেন নূরউদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম। তাদের নেতৃত্বে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে গত ২৮ ও ৩০ মার্চ উপজেলা সদরে দুই দফা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। তারা নুসরাতের পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত শামীমসহ ১৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম (৪৫), মাদ্রাসার ইংরেজী অধ্যাপক আফচার উদ্দিন (৩৫), আলাউদ্দিন (৩০), কেফায়েত উল্লাহ (৩২) নুসরাতের সহপাঠী ও অভিযুক্ত অধ্যক্ষের ভাগনী উম্মে সুলতানা পপি (১৮), মাদ্রাসা ছাত্র নুর উদ্দিন (১৯), নূর হোসেন (২১) ও শহীদুল ইসলাম (১৯)। জোবায়ের আহমেদ (২১), জাবেদ হোসেন (১৯), আরিফুর ইসলাম (১৯) ও আলাউদ্দিন (২০) ।
এদের মধ্যে ৯ জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে রয়েছেন। কাউন্সিলর মাকসুদ আলমের দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে এর আগেও ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে।
নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে একটি বহুতল ভবনে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
সেখানে তার গায়ে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর গত ৮ এপ্রিল তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ১০)।